ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় তিন ইউপি সদস্যদের নেতৃত্বে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  স্কেভেটর দিয়ে ফসলি জমি থেকে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে তিন ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে। কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের তোয়াক্কা না করে মাতামুহুরী নদীর ৩টি পয়েন্ট থেকে দৈনিক ৪০-৫০ ডাম্পার ট্রাক গাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে বালু করছেন।

কাকারা ইউপি চেয়ারম্যানের আশকারা পেয়ে আরও বেপয়োরা হয়ে উঠেছে ইউপি সদস্যরা।

এতে একদিকে যেমন ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে।

ইউপি সদস্যরা হলেন, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নাসির উদ্দিন নাছু, ৮নং ওয়ার্ডের শফিকুল ইসলাম ও ৯নং ওয়ার্ডের আবু নঈম রুমি।

চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কামারপাড়ার কৃষক নুরুল কবির, মকছুদ আহমদ, নুর খান, এমরানুল হক জানান, পরিবারের কিছু কৃষিজমি রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে কৃষি কাজ করে কোন রকম পরিবার চালাচ্ছি আমরা। ওই জমিতে এবারে বাদাম, বেগুন, মরিচ, ফেলন, টমোটো ও মুলা চাষ করেছি।

কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের কৃষি জমির ফসল ঘরে তুলতে দিচ্ছে না। ফসল তোলার আগে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। বাদাম ক্ষেতের মাঝখানে গর্ত করে বালু উত্তোলন করছেন কাকারা ইউনিয়নের তিন ইউপি সদস্য। তারা কারও কথা তোয়াক্কা করছে না।

তারা আরও বলেন, তারা কোন বাধা মানছে না। বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করছেন। জমি থেকে গভীরভাবে খনন করে বালু উত্তোলন করায় আশপাশের জমি ভেঙে পড়ছে। প্রতিদিন অর্ধ শতাধিক পিকআপ গাড়ি সড়ক গুলোতে চলাচল করায় ভেঙ্গে যাচ্ছে। কৃষকরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন কখন কার জমি ভেঙে পাশের গর্তে পড়ে।

এভাবে অন্তত ৩০জন কৃষকের চাষী জমি দখল করে বালু উত্তোলন করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নাসির উদ্দিন নাসু, ৮নং ওয়ার্ডের শফিকুল ইসলাম, ৯নং ওয়ার্ডের আবু নঈম রুমির নেতৃত্বে আরও তিন সদস্য মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। গভীরভাবে জমি খনন করে বালু উত্তোলন কাজে জড়িত রয়েছেন তারা।

মাতামুহুরী নদীর কাকারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কামারপাড়া পয়েন্টে প্রায় ৩০ জন কৃষকের চাষী জমিতে কয়েকটি স্থানে স্কেভেটর দিয়ে অবাধে বালু তুলছেন।

শুধু তাই নয়, নদীর তীর থেকে বালু তোলে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। ফলে অসহায় কৃষকের চাষ করা সব ফসল নষ্ঠ করে ফেলছে। চাষে বিনিয়োগ করা টাকা ঘরে তুলতে পারছে না কৃষকরা।

স্কেভেটর দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর দু’ধারের জমি, ঘর-বাড়ি ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নদীতে বিলিনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে দু’পাড় ভেঙে মাতামুহুরী নদীর মূল মানচিত্র পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় কৃষকরা বালু ব্যবসায়ী তিন ইউপি সদস্য সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দেওয়ার গত দুইদিনও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে সাধারণ কৃষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কারও জমি থেকে বালু উত্তোলন করছি না। উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে কোন লাভ হবে না। মাতামুহুরী নদীর জেগে উঠা চর থেকে বালু উত্তোলনের কথা জানান।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বালুদস্যুরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়েছি। স্থানীয় কিছু কৃষক লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, অনেককে জেল ও জরিমানাও দিয়েছি। কৃষকের ফসলী জমি থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: